মোঃ হাবিবুর রহমান সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আজ ২৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস। ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন আজকের দিনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ঘাটিনা রেল সেতুর পাশে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সিরাজগঞ্জের তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক এ কে শামছুদ্দিন ও সে সময়ের তুখোর ছাত্র নেতা আব্দুল লতিফ মির্জা নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা ও অবাঙ্গালী মারা যান। এছাড়া পার্শ্ববর্তী গ্রামের শিশুসহ আহত হন আরো অন্ততঃ ২০ জন।
এর আগে পাকসেনারা সড়ক পথে উল্লাপাড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ডাব বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। পরে তারা পিছিয়ে গিয়ে পাবনা ও ঈশ্বরদী হয়ে ২৪ এপ্রিল রেলপথে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
বিশ্বস্তঃ সূত্রে খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এদিন সকালে করতোয়া নদীর উপর ঘাটিনা রেল সেতুর ৩/৪টি রেল খুলে নদীতে ফেলে দেন। এরপর নদীর পূর্বপাড়ে শাহজাহানপুর গ্রামের পাশে পরিখা খনন করে প্রতিরোধের জন্য অপেক্ষা করেন।
বেলা ৩টার দিকে ট্রেনযোগে পাকসেনারা ঘাটিনার রেল সেতুর পশ্চিম পাড়ে এসে দাঁড়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেলগুলো এক সঙ্গে গর্জে ওঠে। শুরু হয় যুদ্ধ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাক বাহিনী পিছু হটে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসে।
পরদিন ২৫ এপ্রিল ব্যাপক সমরসজ্জা নিয়ে তারা আবারও ঘাটিনা রেল সেতুর পূর্বপাড়ে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালায়। দ্বিতীয় দফা এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত পিছুপা হতে বাধ্য হন। ব্যাপক মর্টার শেলিং এর ফলে দ্রুত অবস্থান ত্যাগ করেন তারা।
পরে সেতুতে নতুন করে রেল বসিয়ে পাক বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে ট্রেন নিয়ে যাত্রা করেন। বস্তুতঃ এদিন থেকেই গোটা সিরাজগঞ্জ জেলা পাক বাহিনীর দখলে চলে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় ঘাটিনা রেল সেতুর পাশে এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এখানে ২০২০ সালে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আকর্ষণীয় এই স্মৃতিসৌধ দেখতে ভিড় জমান।
Leave a Reply